খাগড়াছড়ি মাটিরাঙ্গায় বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদনে পরিবেশ সুরক্ষা ও পানি সাশ্রয়ে অলটারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রায়িং (এডব্লিউডি) সেচ পদ্ধতি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ধান উৎপাদনে পানি বা সেচ আবশ্যক। সেচের পানির আধিক্যে ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং রোগ পোকার আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। জলাবদ্ধ জমি থেকে ধান গাছ দস্তা ও জিপসাম সার গ্রহণ করতে পারে না। দস্তা গ্রহণ করতে না পারলে ধানে বাদামি দাগ রোগ দেখা দেয়।
জলাবদ্ধ জমিতে বাদামি গাছ ফড়িং, চুঙ্গি পোকার আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। জমিতে পানি আটকে থাকলে ধান গাছে কুশি উৎপাদন ব্যাহত হয়। জলাবদ্ধ জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যায় না এবং মিথেন গ্যাস উৎপাদন হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে বাতাসকে দূষিত করে। সবকিছু বিবেচনায় ধানের উৎপাদন বৃদ্ধিতে এডব্লিউডি খুবই লাগসই পানিসাশ্রয়ী একটি প্রযুক্তি।
মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকার চড়পাড়া ঘুরে দেখা যায়, প্রোগ্রাম অন অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রকল্পের মাটিরাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে আওতায় মাটিরাঙ্গা পৌরসভার চড়পাড়া ব্লকে ২.৫০ একর জমিতে মো. তাজুল ইসলাম, সাজাই মারমা এবং সুফিয়া বেগমসহ ৩ জন কৃষকের নামে ক্লাস্টার এডব্লিউডি প্রযুক্তি প্রদর্শনী দেওয়া হয়।
এ এলাকায় প্রযুক্তিটি নতুন বিধায় আশপাশের কৃষক কৌতূহল হয়ে প্রদর্শনীটি দেখতে ভিড় করছে। এডব্লিউডি প্রযুক্তিতে ধান ক্ষেতে ১২ ইঞ্চি লম্বা ও তিন ইঞ্চি ব্যাসের ছিদ্রযুক্ত প্লাস্টিকের পাইপ যার ৮ ইঞ্চি মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়। যার মাধ্যমে ভেতরের পানির স্তর পরীক্ষা করে প্রয়োজনমতো পানি সেচ দেওয়া হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে সেচ দিলে ধানক্ষেতে ২৮% পানি সাশ্রয় হয়।
এই প্রযুক্তিতে অন্তত ৪ থেকে ৫টি সেচ সাশ্রয় হয়। তাছাড়া এক কেজি ধান উৎপাদনে যেখানে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয় সেখানে এডব্লিউডি প্রযুক্তিতে এক কেজি ধান উৎপাদনে মাত্র ১ হাজার ২০০ লিটার পানি দিলেই হয়।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৩ জন কৃষককে, ব্রি-ধানের বীজ ২০ কেজি, ইউরিয়া সার ২০০ কেজি, ডিএপি ১৫০ কেজি, এমওপি ১২০ কেজি, জিংক সালফেট ৬ কেজি, জিপসাম ৬০ কেজি, বোরণ ৩ কেজি, জৈব সার ১৫০ কেজি, বালাইনাশক, ৬টি এডব্লিউডি পাইপসহ অন্যান্য উপকরণ প্রদান করা হয়।
কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, এডব্লিউডি প্রযুক্তি সম্পর্কে আমি পূর্বে অবগত ছিলাম না। উপজেলা কৃষি অফিস আমাদের পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এডব্লিউডি প্রযুক্তি পরীক্ষামূলকভাবে বেশ সফল। আমি সবসময় এ পদ্ধতি ব্যবহার করবো।
মাটিরাঙ্গা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ চাকমা জানান, সেচের পানি জমিতে সরবরাহের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি এটি, যা পানির অপচয় কমায় এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এতে পানির সাশ্রয় হয়, ভূমিক্ষয় রোধ হয় রোগের প্রকোপ কমে। ফলস্বরূপ, কৃষকরা উচ্চমানের ফলন পাচ্ছেন এবং পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমছে।
এডব্লিউডি একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি মন্তব্য করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে মাটিরাঙ্গায় এই প্রথম এডব্লিউডি সেচ পদ্ধতি প্রচলন হয়। এডব্লিউডি প্রযুক্তি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলে সেচের পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে। একইসঙ্গে কৃষকের সেচ খরচ কমে ধানের ফলন বৃদ্ধি পেয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমবে। এতে পরিবেশ দূষণ, এবং মরুময়তা রোধ হবে। আমরা ভূ-গর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ করতে কৃষকদেরকে পর্যায়ক্রমিক ভেজানো ও শুকানো পদ্ধতিতে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি।